বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪



বাঘায় মাছ ধরে সংসার চলছেনা জেলেদের


আলোকিত সময় :
12.11.2022

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা(রাজশাহী) প্রতিনিধি :

নদীই যাদের জীবিকার প্রধান উৎস্য, সেইসব জেলেদের এখন অনিশ্চিত জীবন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ঋণের কিস্তি তো আছেই। যার ফলে প্রাণের স্পন্দন টের পাওয়া মুশকিল। সরেজমিন শুক্রবার(১১-১১-২০২২)রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাশখালি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটা নৌকা নদীর পাড়ে তুলে রাখা। খুজতে খুজতে দুপুর পৌণে ২ টায় পাওয়া গেল ওই গ্রামের (কালিদাশখালি) জেলে মজনু ফকিরকে। তেমন মাছ না পেয়ে নিজের ডোঙা নৌকা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন,রাত ৩টায় নিজের ডোঙা নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে নেমেছিলেন। ১০০ গ্রাম ওজনের দেড় কেজি ইলিশ মাছ পেয়েছেন । বাজারে যা বিক্রি হবে ৫০০ থেকে ৬০০শ’ টাকায়। আর যে দিন মাছ পাননা,সেদিন সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেননা। মাছ পওয়া যায়না বলে তার দলের ২ জেলে নদীতে নামেননা। তারা বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। ৪ সদস্যর সংসার চলে নদীতে ধরা মাছ বিক্রি করে। নিবন্ধিত জেলে হলেও প্রনোদনা পাননি। তিনি বলেন,জিনিস পত্রের যে দাম,তাতে মাছ ধরে সংসারের সব চাহিদা মেটাতে পারছেন না। কোন কোন দিন নুন ভাত খেয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে। কালিদাশখালি গ্রামের নদীর পাশের বাড়ি জেলে আতিয়ার রহমানের। বয়স ৩৫ বছর হবে। নিজের আয়ে সংসার চলে না বলে ১৩ বছর বয়সের ছেলে মজনু রহমানকে সেলুনে কাজে লাগিয়েছেন। ১৮ বছর বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ১ বছর আগে । ছোট ছেলে শান্ত ৪র্থ শ্রেণীতে লেখা পড়া করে। তিনি জানান, প্রনোদণার ২৫ কেজি চাল পেয়েছিলেন, নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ের দিকে। কিন্তু তার মতো চাল পাওয়া জেলের সংখ্যা হাতে গোনা। জেলে আজগর আলী সেখ বলেন, নিজের জাল, নৌকা নেই তার।

অন্যের সঙ্গে ভাগে মাছ ধরার সুযোগ পাওয়ার আশায় বসে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু নদীতে জাল ফেলেও মাছ পাচ্ছেন না। ক্ষ্যাপলা জাল নিয়ে মাছ ধরার জন্য নদীর পাড় দিয়ে ঘুরছিলেন আরেক জেলে জামাল উদ্দীন। দুপুর ১টা পর্যন্ত কোন মাছই পাননি। তিনি জানান,তার কোন কার্ড হয়নি। জেলে আতিয়ার রহমান বলেন,‘নিজের জাল, নিজের নৌকা। নিজেই মাছ ধরেন। ২২দিন নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার আগে ৩০ হাজার টাকা ঋণ করেছেন । এই টাকা দিয়ে সংসারে খরচসহ জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করেছেন। ধারনা করছিলেন নদীতে ধরা মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন। তিনি বলেন,সারাদিনে যে মাছ পায়,তাতে নৌকায় সেটিং করা ইঞ্জিনের তেলের খরচ আসেনা। তাই নদীতে নামছেন না। তার দলে যে ২জন ছিল, তারা এলাকার বাইরে কাজে গেছে। জেলে শাকিম আলী বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মাছ ধরার জন্য জাল ঠিক করছিলেন জেলে মালেক বেপারিসহ কয়েকজন। তারা জানান,বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি যখন স্বচ্ছ হয়ে ওঠে, আর সেই পানিতে যখন মাছ আসে, তখন নদীতেই সারা দিন কাটে তাদের। অন্য সময় কখনও হয়তো ভাড়ায় মাছ ধরতে যান কোনো পুকুর বা ঘেরে, অথবা কামলা খাটেন। কোষা নৌকায় ভেসে কচাল পাতেন, মাইজাল ফেলে মাছ ধরেন কিশোরপুর গ্রামের জেলে অদৈত্য হোলদার। ভাগে মাছ ধরে কখনো ৫০০শ’ টাকার মাছ পান দিনে। কার্তিকের পর পানি নেমে গেলে সে সুযোগও চলে যায়। তিনি বলেন, কার্তিক গেলেই আজন্ম জেলে তখন হয়ে পড়েন পর নির্ভরশীল কামলা। এলাকার জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬০ জন। এর বাইরেও অনেক জেলে রয়েছে। নদীতে মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে বাধ্য হয়ে এলাকার বাইরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। মৎস্য দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে ইলিশ আহরণকারি জেলের সংখ্যা ৮৮৫ জন। প্রনোদনা পেয়েছেন ৭৫৫ জন। ইউপি চেয়ারম্যান ডি এম বাবুল মনোয়ার বলেন, এই গাঁয়ের ৩ভাগের ২ভাগ ঘর-গৃহস্থালির সবটাই নদীতে। অনেকের মতো ভাঙনে জেলেরাও ভিটে মাটি হারিয়েছেন। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ২৪৬ জনের তালিকা করেছি। কিন্তু মেলেনি সরকারি কোন সহায়তা।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি