শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪



৫ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তায়


আলোকিত সময় :
12.02.2023

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :

করোনার অভিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ক্রমেই কমছে। প্রতি বছরই এই সংখ্যা শতাংশ হারে উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। সরকারের নেওয়া নানামুখী কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচির পাশাপাশি সুলভ মূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে নগদ আর্থিক সুবিধাও। এসব সুবিধা নিয়ে মানুষ স্বাবলম্বি হচ্ছে। দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষকে অর্থ ও খাদ্যসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার বিশেষ ধরনের মানুষকেও আর্থিক ও খাদ্যসহায়তা  দিয়ে থাকে, যা বস্তুত সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে এসব মানুষকে রাখা।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের দরিদ্র মানুষের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশে সাড়ে ১৪ কোটি মানুষের হিসাবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি। এর মধ্যে অতিদরিদ্র দেড় কোটির মতো।

২০০৯ সালে দরিদ্র ছিল ৩৩.৪, ২০১০ সালে ৩১.৫, ২০১১ সালে ২৯.৬, ২০১২ সালে ২৮.৫, ২০১৩ সালে ২৭.২, ২০১৪ সালে ২৬.০, ২০১৫ সালে ২৪.৮, ২০১৬ সালে ২৪.৩, ২০১৭ সালে ২৩.১, ২০১৮ সালে ২১.৮, ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে অতিদরিদ্র ২০০৯ সালে ছিল ১৯.৩, ২০১০ সালে ১৭.৬, ২০১১ সালে ১৬.৫, ২০১২ সালে ১৫.৪, ২০১৩ সালে ১৪.৬, ২০১৪ সালে ১৩.৮, ২০১৫ সালে ১২.৯, ২০১৬ সালে ১২.১, ২০১৭ মালে ১১.৩, ২০১৮ সালে ১০.৫, ২০১৯ সালে ১০.৫ শতাংশ মানুষ। এই হিসাবে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই সর্বোচ্চ ৩ থেকে নিচে ১ দশমিক হারে দরিদ্র ও হতদরিদ্রের হার কমে আসছে। সরকারের আশা, ২০৪১ সাল নাগাদ দেশে হতদরিদ্র মানুষ শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থবছরে (২০২২-২৩) সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষকে নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা চলমান রয়েছে। এই খাতে  সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে বছরে ৫৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা, শহিদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা হিসেবে নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বছরে ১০০ দিনের টাকার বিনিময়ে কর্মসৃজন কর্মসূচিও চালু রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার। এর বাইরে ১১টি কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার জনকে বিভিন্নভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভিজিএফে ১ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬২ লাখ ৫০ হাজার, ওএমএস ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার, জিআর (খাদ্য) ৩৩ লাখ, কাবিটা ১৮ লাখ ২০ হাজার, কাবিখা ১ লাখ ৮০ হাজার এবং ভিডব্লিউবি কার্যক্রমে সাড়ে ১০ লাখ মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় পরিচালিত হয়। এসব খাতে ১২৩টি কর্মসূচি চলমান। তবে একই ব্যক্তি একাধিক ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী রয়েছেন বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া  বলেন, একই ব্যক্তি যাতে একাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত না হতে পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা অব্যাহত আছে। অনলাইনের ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি হলে ঐ অসুবিধা থাকবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী ২০৪১ সালের আগেই দেশ উন্নত বিশ্বের তালিকায় স্থান পাবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে সর্বাত্মক উদ্যোগ-প্রচেষ্টা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী আশ্রায়ণ প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। রাজনীতিক, সরকারি কর্মচারী, সমাজসেবকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ আরো কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভাতা ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি