
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে প্রতিবছর যতটা পরিমাণ ছোলা বিক্রি হয়, তার বড় অংশের বেচাকেনা হয় রোজাকে কেন্দ্র করে। তবে এবার ছোলা কিনতে মানুষের আগ্রহ কম বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ছোলা বিক্রির পরিমাণ কমাচ্ছে। দেশের এক কোটি পরিবার কার্ডধারীর জন্য গত বছর রোজায় যে পরিমাণ ছোলা বিক্রি করেছিল, এবার তার অর্ধেক বিক্রির পরিকল্পনা সংস্থাটির।
রোজার সময়ে বাংলাদেশে যে পণ্যটি ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়, এবারে সেই ছোলার চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায় ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে। একজন ক্রেতা জানালেন, প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার কারণে তিনি এবার রোজায় যতটা সম্ভব ব্যয় সাশ্রয় করতে চান।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঋণপত্র খোলার সমস্যার কারণে ছোলার আমদানি কম হতে পারে, এমন শঙ্কা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত যে পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে, তাতে বাজারে ছোলার সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। উল্টো ছোলার চাহিদা কমার কারণে দাম কিছুটা কমে আসতে পারে। ইতিমধ্যে বাজারে সেই প্রবণতা দেখাও দিয়েছে। টিসিবির বাজারদরের তালিকা থেকে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম কমেছে সাড়ে ৫ শতাংশের মতো।
চকবাজার ডালপট্টির আমদানিকারকেরা বলছেন, রোজা উপলক্ষে ছোলা-জাতীয় পণ্যের কেনাকাটায় যে চাপ প্রতিবছর থাকে, এবার তা নেই। এর মধ্যে বাজারে ডাল-জাতীয় অন্যান্য পণ্যের দামও একটু কমতে শুরু করেছে। রোজার মধ্যে ছোলার বাজারে আর কোনো সংকট হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, ডাল ও ছোলার দাম কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বেচাকেনার অবস্থাও ‘ঠান্ডা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুধু যে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা কমার কথা বলছেন তা-ই নয়, খুচরা বিক্রেতাদের মুখেও একই কথা। তাঁরাও বলছেন, বাজারে এই সময়ে এসে ছোলার মতো পণ্যের বেচাকেনার যে ধুম পড়ে যায়, এবার সেই অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। তাতে এবার রমজানে ছোলার বাজার কিছুটা ঝিমিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেট কাঁচা বাজারের ডি ব্লকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হৃদয় স্টোরের মালিক মো. হৃদয় বলেন, রোজার বাজারের জন্য ছোলা বিক্রির আলাদা একটা প্রস্তুতি থাকে। সেটা রোজার আগেভাগেই নেওয়া হয়, এবারও সেভাবেই প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বেচাকেনার অবস্থা প্রত্যাশা পূরণ করছে না। তাঁর ভাষায়, মোটামুটি বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে আমদানির তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের আড়াই মাসে (জানু-১৫ মার্চ) ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টন। এক মাস আগেও ছোলা আমদানিতে যে সংকট ছিল, তা কেটে গেছে ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ার পর।
ছোলার মতো আমদানি কমেছে মটর ডাল ও মসুর ডালের। মটর ডালের আমদানি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। চলতি বছরের আড়াই মাসে (জানু-১৫ মার্চ) মটর ডাল আমদানি হয় ৭৬ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার টন। আবার গত বছর একই সময়ে যেখানে মসুর ডালের আমদানি ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার টন, সেখানে এবার আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার টন।