শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪



মাদারীপুরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস খাদে, নিহত-১৯ আহত-১৫


আলোকিত সময় :
19.03.2023

সাব্বির হোসাইন আজিজ, মাদারীপুরঃ

মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে কুতুবপুর এলাকায় খুলনা থেকে ছেড়ে ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। এবং  ঘটনাস্থলেই ১৪ জন মারা যায়। পরে শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৫ জন মারা যায়। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলেও পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় মৃতদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়, সেখান থেকে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রবিবার বিকেল পর্যন্ত ১৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। বাকি ৫ জনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে আট টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকায় যাওয়ার পথে পদ্মাসেতুর অদূরে  ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচর পদ্মাসেতু এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় আসলে বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রায় ৩০ ফিট নিচের খাদে পড়ে যায়। খাদে পরে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে সামনের একটি চাকা ফেটে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়।  এ দূর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকায় মারা যায় আরও ৫ জন। দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে শিবচর, শরীয়তপুর, ভাঙ্গা ও ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের ৬ টি টিম উদ্ধার কাজ শুরু করে। দুই ঘন্টায় উদ্ধার কাজ শেষ হলেও প্রায় চার ঘন্টা পরে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বাসটি উদ্ধার করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত ১৯ জনের ১৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। নিহতরা হলো, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নীলকাটি গ্রামের কাঞ্চন শেখের ছেলে ও বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের ছোট ভাই শেখ কবীর হোসেন(৫৩), গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার বড় মেয়ে  ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের মাস্টার্স সম্পন্ন করা ছাত্রী আফসানা মিমি(২৪), গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার আদমপুর গ্রামের আমজাদ খানের ছেলে মাসুদ খান (৩২), গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর উত্তর পাড়া গ্রামের তৈয়ব আলী মিয়ার ছেলে হোদায়েত হোসেন (৩৪), গোপালগঞ্জ সদরের মাসুদ রহমানের মেয়ে ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুইটি আক্তার (২৭), গোপালগঞ্জ সদরের নওশেদ শেখের ছেলে সজীব শেখ (২৬), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চন্দ্রাপাড় এলাকার বকুল শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার (৫৫), গোপালগঞ্জ জেলার বনগ্রামের মাসুদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মোস্তাক শেখ (৫০), গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের ডিডি অনাদী রঞ্জন মন্ডল (৫২), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর  ছেলে আব্দুল্লা আল মামুন (৫০), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার নিতাই ডাঙ্গা গ্রামের শহীদ মুরাদ আলীর ছেলে  ইসমাইল হোসেন (৪০), খুলনা সাউথ সেন্টার এলাকার চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন ঘোষ (৪৫), খুলনার মেক্সিমেল গ্রামের পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব সাধু (৪২) ও বাস চালক যাত্রীবাড়ী এলাকার জাহিদ হোসেন। বাকি ৬ জনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহতের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। নিহত আফসানা তার সনদ আনার জন্য বাবাকে নিয়ে ময়মনসিংহ বিশ্বিবিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নিহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির হোসেন বলেন, বাসটি পদ্মা সেতুর এপ্রোস সড়ক থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আন্ডারপাসে নিচে পড়ে যায়। এর প্রায় একশ ফিট আগে একজন পথচারীকে চাপা দিয়ে আসে। এর পর থেকে ড্রাইভার বাসটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেনি। পথচারীর ব্যাপারের পুলিশ সঠিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওই বাসের যাত্রী খুলনা জেলার আনোয়ারা বেগম বলেন, বাসটি হঠাৎ ডানে মোড় নেয়। তার পরে আবার বামে মোড় নিতে গিয়ে রাস্তায় গাড়ি রাখতে পারেনি। জানালা দিয়ে ছিটকে পড়ায় সে প্রাণে বেচে যায়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আবু নাঈম মো. মোফাজ্জল হক বলেন, দূর্ঘনার সংবাদ পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে তারা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। গতি নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিদিনই মামলা দেয়া হয়।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো: মাসুদ আলম বলেন, এ দূর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বাসটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২ জন ঢাকায় মারা গেছে বলে শোনা যায়।


এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি