সঞ্জয় ব্যানার্জী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
এ সময় পানিতে থৈ থৈ করার কথা থাকলেও শুকিয়ে আছে পটুয়াখালীর গ্রামগঞ্জ। শুধু কি গ্রামগঞ্জ, নদী-নালা ও খাল-বিলেও নেই পানি। এতে উপজেলায় কমে গেছে মাছ। তবে কৃষকদের দাবী পানির অবারে ধান চাষ করা যায়নি। অন্যদিকে আউশ ও রোপা আমন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। বোরো মৌসুমে জমির উর্বরতা নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের। এ যেন উপজেলাবাসীর এক বোবা কান্না।
সরেজমিনে দেখা যায়, দশমিনা উপজেলা তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী উপজেলার । একে কৃষিনির্ভর এলাকার উপজেলাও বলা হয়। সবচেয়ে নিচু ভূমি হিসেবেই পরিচিত। এ উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য ছোট ছোট নদী, নালা ও খাল। এ উপজেলার পুর্বপাশে তেঁতুলিয়া নদী, দক্ষিনপাশে গলাচিপা, পশ্চিমপাশে পটুয়াখালী জেলা শহর ও উত্তর পাশে বাউফল উপজেলা।
প্রতি বছর এসময় এপ্রিল ও মে মাসে এসব এলাকার পানির দেখা মেলে। আর জুন মাসে ভরা বর্ষা থাকে। আর অথৈ পানি যেন এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। অভাব হয়না মাছেরও। বর্ষার পানির সঙ্গে বেড়ে ওঠে আউশ ও বোনা আমন ধান। কিন্তু এ বছর বর্ষার মৌসুমেও পানির দেখা মিলছে না। কোথাও পানি নেই।
নেই আউশ ও বোনা আমন ধানের আবাদ। যে কয়েকটি জমিতে ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা তাও ফলন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান। তাদের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে পানি না এলে জমিতে পলিও আসবে না। ফলে আগামী বোরো আবাদও ভালো হবে না। মাছও পাওয়া যাবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২হাজার ৩শ’ ৫৭হেক্টর যা গত বছরের তুলনায় ৫শ’ ৭৭হেক্টর বেশি। কিন্তু রোপা আমন আবাদে নির্ধারন করা হয়েছে ১৮হাজার ৫শ’ হেক্টর যা গত বছরের সমমান।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের চাষি সংকর চন্দ্র শীল, মজিদ হাওলাদার, মজিবর রাড়ি, আবুল হোসেন মৃধা ও জামাল হোসেন মৃধা বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর বর্ষা মৌসুমেও পানি হয়নি। অন্য বছর এ সময় হাওরে পানি পরিপূর্ণ থাকতো। তারা আরো বলেণ, এ বছর বৃষ্টি নেই। অন্য বছর এ সময় নদী-খাল বিল ও গ্রামগঞ্জ পানিতে ভর্তি থাকে। পানি না হলে জমির বল হয় না। যদি পানি না থাকলে ধানের মতো মাছও হবে না।
উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের বগুড়া গ্রামের চাষি ইউনুছ তালুকদার, নশা মিয়া তালুকদার, রেজাউল হোসেন বলেন, ভরা বর্ষার মৌসুম আমাদের পূর্ণ পানি থাকার কথা।
উপজেলার দশমিনা সদর ইউনিয়নের চাষি রফিক হোসেন বলেন, এখন বর্ষাকাল। কিন্তু এলাকায় এখনো আল্লাহ বৃষ্টি দেননি। এখন ইরি ধান উঠতে শুরু করেছে। পানি থাকলে এ ধান আরও লাগাতে পারতাম। কিন্তু পানির অভাবে আমরা কিছুই করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, পানির অভাবে জমিতে ধান করা যায়নি। কোনো ধানই পানির অভাবের কারণে করা যাচ্ছে না। আমরা মানুষ কীভাবে বাঁচব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জাফর আহম্মদ বলেন, সারাদেশের মতো এ বছর দশমিনায় বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। অন্য বছরের মতো আউশ মৌসুমে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা তা এবার হয়নি। ফলে আউশের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অর্জন সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এখন বৃষ্টি হচ্ছে তাই কৃষকরা রোপা আমনের বীজতলাগুলো প্রস্তুত করবে। তবে আমনের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা হবে না।